বাংলাদেশের একটি এনজিওকে মিলিয়ন ডলার সহায়তার দাবি ট্রাম্পের, কী জানা যাচ্ছে?
বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি ঢাকায় নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশে এনজিও সেক্টর, বিশেষ করে বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে এত অর্থ কারা পেয়েছে এবং কীভাবে ব্যবহার হয়েছে?
যদিও বাংলাদেশের এনজিও ব্যুরো বলছে, নিবন্ধিত ও সক্রিয় কোন এনজিওর কাছে এই অর্থ আসার কোন তথ্য তারা পায়নি।
এনজিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবিকে অস্বাভাবিক মনে করেন তারা। সে কারণে তারা মনে করেন এমন বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউএসএআইডির উচিত কারা ওই অর্থ পেয়েছে সেটি প্রকাশ করা।
"বিষয়টি আমরা এর মধ্যেই চেক করেছি। এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে সক্রিয় কোন এনজিওর মাধ্যমে এসেছে- এমন কোন প্রমাণ আমরা পাইনি । যুক্তরাষ্ট্র সরকার কিছু টাকা আরও কিছু প্রক্রিয়ায় পাঠায়। সেভাবে কোন অর্থ এসেছে কি না তা আমাদের জানা নেই," বিবিসি বাংলাকে বলেছেন এনজিও ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন।
এর আগে চলতি মাসের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগ (ডিওজিই) বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের অনেক প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলো।
সংস্থাটি তখন জানিয়েছিলো যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেয়া একটি প্রকল্পে ২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।
কিন্তু শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থার কাছে গেছে, যার নাম আগে কেউ শোনেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দিক থেকে এমন অভিযোগ আসার পর বাংলাদেশের এনজিও খাতের জন্য এটি নেতিবাচক হবে কি-না বা এনজিওদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কী বলেছেন ?
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বিদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করতে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক সহায়তায় পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক সহায়তা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবছর দেয়া সহায়তার পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই সংখ্যাটা প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন ডলার ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বড় অংশই আসে ইউনাইটেড স্টেটস্ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএআইডি এর মাধ্যমে।
এই সংস্থার তথ্য বলছে, এই অর্থ যেসব খাতে ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা, পরিবেশ ও জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা।
কিন্তু ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে তিন মাসের জন্য এই ইইউএসএআইডির সব কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
এসব নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই শুক্রবার হোয়াইট হাউজে গভর্নরদের সাথে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়েছে, যার নাম এর আগে কেউ শোনেনি।
"ছোট একটি সংস্থা। এখান থেকে দশ হাজার, সেখান থেকে দশ হাজার পায়। তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার। দু'জন কাজ করে। আমি মনে করি তারা খুবই খুশী। শিগগিরই এই প্রতারণার জন্য বিজনেস সাময়িকীর প্রচ্ছদে জায়গা পাবে," বলেছেন তিনি। তবে ওই দুজন কিংবা তাদের সংস্থাটির নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
একটি এনজিও ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য সামাজিক ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তাহলো বাংলাদেশে এনজিও সেক্টর, বিশেষ করে বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ উঠতে পারে কি-না।
ইউএসএআইডির অর্থ নিয়ে কাজ করতো এমন সংস্থাগুলোর কোন কোনটি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পর যেসব প্রশ্ন উঠছে সেগুলোর জবাব তৈরিতে তারা এখন কাজ করছে।
বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও খাত নিয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির।
এর নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, "এটি (ট্রাম্পের দাবি) একটি অস্বাভাবিক দাবি। আমার মনে হয় ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাতিলকে বৈধতা দিতে এখানে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এভাবে কোন সংস্থার অর্থ নেয়ারই সুযোগ নেই"।
ডঃ ইফতেখারুজ্জামান বলছেন ২৯ মিলিয়ন ডলার যদি এমন কোন সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে তাহলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা।
"কারণ ১ ডলারই হোক আর ২৯ মিলিয়ন ডলারই হোক- সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোন অর্থ ছাড় হওয়া অসম্ভব। আর এককভাবে কোন সংস্থার ২৯ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার খবরটিই অস্বাভাবিক," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
তবে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের সামাজিক ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান রাজনীতি, গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে গত কয়েক বছর কাজ করছে এখন তাদের অনেকের দিকেই আঙ্গুল তুলতে শুরু করেছেন অনেকে।
বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থ 'বাংলাদেশের রেজিম চেঞ্জ বা সরকার পরিবর্তনে ব্যবহার হয়েছে কি-না' এমন প্রচারও চলছে।
Comments
Post a Comment